এই পাষবিকতার শেষ কোথায়?
এস এম আজম
——————————————————
গত সপ্তাহের আলোচিত- সমালোচিত সংবাদ ছিল ধর্ষণ। আর এই ধর্ষণ কর্মের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা ছিল দলবদ্ধ আমরা যার নাম দিয়েছি গণধর্ষণ।
ধর্ষণের সাথে ‘গণ’ শব্দটার সংযুক্ততা আমার কাছে সমিচীন বলে মনে হয়না। কিন্তু আমার এ চিন্তাবোধ যে সুশীল ব্যক্তিবর্গের নিকট রিক্তের বেদন বৈ কিচ্ছুইনা। যাক সে কথা।
আমার জন্ম জেলা দিনাজপুর। সেই সুবাদে দিনাজপুরের প্রতি একটা অন্যরকম প্রীতি থেকেই যায়। সেই প্রীতিবোধ থেকে হলেও দিনাজপুরের ইতিহাস-ঐতিহ্য’কে আন্তরিকতার সাথে স্মরণ রাখা ও জানা একপ্রকার কর্তব্য বটে। কিছুদিন আগেই দিনাজপুরের রামনগরের মেয়ে ইয়াসমিনের প্রয়াণ দিবস পালিত হলো। গত শতকে কিছু কুলাঙ্গার পুলিশের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়; অতঃপর তাদের হাতেই প্রাণ দিতে হয় কিশোরী ইয়াসমিনকে। সেসময় এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে বেশ আন্দোলন হয়েছিল। আন্দোলনে ৭জনকে আত্মাহুতিও দিতে হয়েছিল।
এরপর পালাক্রমে কতশত ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে এই পবিত্র বেলাভূমিতে। কিন্তু সেই ইয়াসমিন হত্যার আসামিদের শাস্তির পর আর এ জমিনে একই অপরাধের জন্য তেমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ঘটনা দেখেনি দেশবাসী। তনু হত্যা, নুসরাত হত্যাসহ অসংখ্য ধর্ষিতা মা-বোনের ওপর কথিত যৌন লালসার স্টিমরোলার চালানোর বিচার আজো হয়নি। কিন্তু কেন? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে আর বেগ পেতে হয়না। হয়না ঘণ্টার পর ঘণ্টা একমনে চিন্তার বেড়াজালে জড়াতে।
সম্প্রতি সিলেটের এম সি কলেজে যুবতী ধর্ষণের ঘটনা জাতির কাছে এক বিরাট প্রশ্ন দাঁড় করিয়েছে। প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে প্রতিষ্ঠান প্রশাসন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার সময়ে কেন ছাত্রাবাসে ধর্ষক কথিত ছাত্ররা থাকার সুযোগ পায়? তাহলে কি প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠান প্রশাসনের কাছে নয়?
গেল ২০১৮ সালে ধর্ষণের শিকার হয় ৭৩২ জন; ২০১৯ সালে তা দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়ায় এক হাজার চার শতেরও অধিক। [সূত্রঃ প্রথম আলো] কিন্তু কোনটারও বিচার হয়নি। মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত হত্যার আসামী সিরাজের ফাঁসির দন্ডাদেশ হওয়ার পরও এখনও তা কার্যকর হয়নি।
ধর্ষণ কর্মে উপযুক্ত ব্যক্তিদের মাঝে একটা দলনীতি লক্ষ্য করা যায়। হয় তারা রাজনৈতিক পরিচয়ে বা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে নাহয় দলবদ্ধ হয়ে এই অনৈতিক কাজে লিপ্ত হয়। সবচেয়ে অবাক করার বিষয়, এদেশকে আমরা মাতৃতুল্য মনে করি, এদেশের রাষ্ট্রপরিচালক নারী, স্পিকার নারী, বিরোধী দলীয় নেত্রী নারী, সংসদে সংরক্ষিত আসনে বৃহৎ পরিসরে নারী, প্রতিটি ইউনিয়নে কমপক্ষে তিনজন নারী, জনপ্রশাসনে নারী, জেলা প্রশাসনে নারী, উপ-জেলা প্রশাসনে নারী, গৃহায়ণে নারী, শিক্ষা- চিকিৎসা অঙ্গনে নারী, শিল্পে নারী, সংস্কৃতিতে নারী, মিডিয়ায় নারী, প্রতিরক্ষায় নারী। নারীর এতো বৃহৎ ক্ষমতায়নেও কেন এই ধর্ষণের প্রতিকার হচ্ছেনা। রাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গে নারীর পদচারণা, তারা আজ গৃহপরিচালক থেকে রাষ্ট্রপরিচালক তবুও কেন এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ প্রতিবাদ হচ্ছেনা।
আশা করা যায়, সাধারণ নারী বা গুরুপূর্ণ পর্যায়ের পুরুষ বাদের ওয়ার্ড থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত যদি নারীরা ধর্ষণের বিরুদ্ধে একটা বলিষ্ঠ গর্জন দেয়। তাহলে মায়ের বুকের দুধ খাওয়া কোন পশু রূপী পুরুষের দুঃসাহস হবেনা কোন নারীর দিকে চোখ তুলে তাকাবার। লজ্জার বিষয় হচ্ছে এই ত্রিশ লক্ষ শহীদের জমিনে সত্তর বছরের বৃদ্ধা থেকে শুরু করে ছয় বছরের শিশু পর্যন্ত ধর্ষণ নামক পাশবিকতার শিকার হয়। এ লজ্জা কোথায় রাখবো!
যেভাবে ধর্ষিতার তালিকা লম্বা হচ্ছে এমন এক সময় আসবে যখন বাংলার প্রতিটি ঘরের নারী ধর্ষিতা বলে চিহ্নিত হবে। আমাদের মূল্যবোধ কোথায় গিয়ে ঠেকেছে? আজকে আপনার- আমার সন্তান- বোনকে শিক্ষার জন্য বিদ্যালয়ে পাঠাতেও বুক ধরফড় করে। একটা আতঙ্ক সবসময় থাকে। নিজের বাবার কাছেও মেয়ে নিরাপদ নয় তাহলে কার কাছে তারা নিরাপদ? রাষ্ট্র তাদের সুরক্ষা, নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ; শুধু রাষ্ট্রই নয় পরিবারও।
এসকল অনৈতিক, অশ্লীল, অন্যায় কাজ করার সাহস, উদ্দীপনা, উৎসাহ অপরাধীরা কোথা থেকে পাচ্ছে? প্রায় ৭০ শতাংশ শিক্ষিতের দেশে এহেন বর্বরচিত, অন্ধকার, আইয়্যামে জাহেলিয়াত যুগের মতো কর্মকাণ্ড হয় নিশ্চয় প্রশংসনীয় নয়।
Post Views:
508