আয়েশা (রা.) বলেন, আমার উপর আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ এই যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমার ঘরে, আমার পালার দিন এবং আমার বুক ও গলার মধ্যে হেলান দেওয়া অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। আর তাঁর মৃত্যুর পূর্বক্ষণে পার্থিব জীবনের শেষ দিন ও পরকালীন জীবনের প্রথম দিন আল্লাহ আমার মুখের লালার সাথে তাঁর মুখের লালা মিলিয়ে দিয়েছেন। আর আমার ঘরেই তাঁর দাফন হয়েছে’। [৩]
.
আয়েশা (রা.) থেকে অন্য বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন, যখন মৃত্যু ঘনিয়ে এল, তখন তাঁর মাথা ছিল আমার রানের উপর, তিনি বেহুঁশ হয়ে গেলেন। তারপর হুঁশ ফিরে এল। তখন তিনি ছাদের দিকে চক্ষু নিবদ্ধ করলেন। অতঃপর বললেন,
اللَّهُمَّ الرَّفِيْقَ الْأَعْلَي
‘হে আল্লাহ! হে সর্বোচ্চ বন্ধু’! আর এটাই ছিল তাঁর শেষ কথা।
আয়েশা (রা.) বলেন, এর দ্বারা আমি বুঝলাম, এখন তিনি আর আমাদের পসন্দ করবেন না। বুঝলাম, যে কথা তিনি সুস্থ অবস্থায় বলতেন, সেটাই ঠিক হ’ল। তা এই যে,
لَنْ يُقْبَضَ نَبِيٌّ قَطُّ حَتَّى يُرَى مَقْعَدَهُ مِنَ الْجَنَّةِ ثُمَّ يُخَيَّرُ
‘কোন নবী মৃত্যুবরণ করেন না, যতক্ষণ না জান্নাতে তাঁর ঠিকানা দেখানো হয়। অতঃপর তাঁকে এখতিয়ার দেওয়া হয় দুনিয়ায় বেঁচে থাকার অথবা মৃত্যুবরণ করে জান্নাতে যাওয়ার’।
আমি বুঝলাম যে, তিনি আখেরাতকেই পছন্দ করলেন। [৪] অতঃপর আমি তাঁর মাথা বালিশে রাখি এবং অন্যান্য মহিলাদের সাথে কাঁদতে কাঁদতে উঠে আসি’। (ইবনু হিশাম ২/৬৫৫)
ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজে‘ঊন (আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তনকারী। (আল-বাক্বারাহ, ১৫৬)
উপরোক্ত দুই বর্ণনার সমন্বয় এটাই হ’তে পারে যে, বুকের উপরে মৃত্যুক্ষণ উপস্থিত হ’লে তিনি তাঁকে স্বীয় রানের উপরে শুইয়ে দেন এবং তখনই রাসূল ﷺ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
দিনটি ছিল সোমবার (সহীহ বুখারী, হাদিস নং ১৩৮৭) সূর্য অধিক গরম হওয়ার সময় (حِينَ اشتدَّت الضحي) অর্থাৎ ১০/১১ টার সময়। এ দিন তাঁর বয়স হয়েছিল চান্দ্রবর্ষ হিসাবে ৬৩ বছর (সহীহ বুখারী, হাদিস নং ৩৫৩৬) [৫] চার দিন (রহমাতুল্লিল ‘আলামীন ১/২৫১)।
❒ রেফারেন্সঃ
[১] সহীহ বুখারী, হাদিস নং ৪৪৪৯; মিশকাত, হাদিস নং ৫৯৫৯।
[২] সহীহ বুখারী, হাদিস নং ৪৫৮৬, ৫৬৭৪; মিশকাত, হাদিস নং ৫৯৫৯-৬০; ঐ, বঙ্গানুবাদ, হাদিস নং ৫৭০৭-০৮।
[৩] قَبَضَهُ اللهُ بَيْنَ سَحْرِى وَنَحْرِى وَدُفِنَ فِى بَيْتِى সহীহ বুখারী, হাদিস নং ১৩৮৯, ৪৪৪৯, ৪৪৫১; মিশকাত, হাদিস নং ৫৯৫৯; ঐ, বঙ্গানুবাদ, হাদিস নং ৫৭০৭।
[৪] সহীহ বুখারী, হাদিস নং ৬৩৪৮; সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ২৪৪৪; মিশকাত, হাদিস নং ৫৯৬৪; দারেমী, হাদিস নং ৭৭; মিশকাত, হাদিস নং ৫৯৬৮।
[৫] অধিকাংশ জীবনীকারের মতে দিনটি ছিল ১১ হিজরীর ১২ই রবীউল আউয়াল মোতাবেক ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দের ৬ই জুন। তবে যেহেতু ছহীহ হাদীছ অনুযায়ী রাসূল ﷺ এর জন্ম ও মৃত্যু দু’টিই সোমবারে হয়েছিল (সহীহ মুসলিম হা/১১৬২; সহীহ বুখারী হা/১৩৮৭)। অতএব সেটা ঠিক রাখতে গেলে তাঁর জন্ম ৯ই রবীউল আউয়াল সোমবার এবং মৃত্যু ১লা রবীউল আউয়াল সোমবার হয়’ (বিস্তারিত দ্রঃ ‘জন্ম ও মৃত্যু’ অনুচ্ছেদ)। রাসূল ﷺ এর জন্ম ও মৃত্যু তারিখ অস্পষ্ট রাখার মধ্যে শিক্ষণীয় এই, যাতে তাঁর উম্মত অনুষ্ঠানসর্বস্ব হয়ে না পড়ে এবং জন্ম দিবস ও মৃত্যু দিবস পালন করার মত বিদ‘আতী কাজে লিপ্ত না ।
Incredible points. Great arguments. Keep up the amazing work.