এম আজম
প্রায় বছর দু’য়েক হতেই কেমন জানি অশান্তি আর অস্বস্তির মধ্যে দিনাতিপাত করছি। কোন অজানা ভ্রম গ্রাস করে রেখেছিল আমাকে, যার অবসান ঘটে এক বন্ধুর আহ্বানে। আজ আমার অদ্যাপিত জীবনাংশের সবচেয়ে আনন্দ ও সুখময় দিন। সতেরোর ভয়াবহ বন্যার পর কুরবানি ঈদ উপলক্ষে কয়েকজন বন্ধুর সমন্বয়ে বর্ন্যাত মানুষদের সার্মথ্য সংখ্যক সহযোগিতা করতে পেরে।
বন্যায় মানুষের অসহনীয় যাতনার কথা ভাবলে শিহরিত হই। বন্যায় আমার থাকবার ঘরসহ বাড়িশুদ্ধ জলে ভরপুর। চারদিকে শুধু পানি আর পানি। থৈ থৈ জলের সাথে গুড়িগুড়ি বর্ষণ। মেঘের গম্ভীর হুংকারে বার বার আতকে উঠছি আর ভাবছি প্রকৃতি কত রূপই না ধরতে পারে, ক্ষণে ভালো তো ক্ষণে মন্দ। জলের নিচা তলিয়েছে কত উনুন, ছোট ছোট বাচ্চারা ক্ষুধার জ্বালায় প্রায় নুয়ে পড়েছে। বয়বৃদ্ধদের নাকাল অবস্থা।
আমাদের ছোট্ট গ্রামটা তার নামের মতোই কত সুন্দর, এক পলক তাকালে যেকেউ তার অপরূপ সৌন্দর্যের মাঝে হারিয়ে যাবে। যেন বাংলার অপ্সরী কন্যা। সেই অপ্সরী যার রূপের ঝংকারে সৌন্দর্য্য উপছে পড়ে লোভাতুর সবুজতা আজ জলমগ্ন। সবুজ ক্ষেত পানির তলায় হারিয়েছে।
আমি জীবন, মামুন, আজিজ, বিপ্লব, মিলন ভাইয়ের সমন্বয়ে আমাদের মিশন শুরু করি।আমাদের এই সেচ্ছাসেবা কার্যক্রমে স্জথানীয় জনপ্রশাসনের দারস্থ হলে তারা আমাদের নিরাশ করে। কিন্তু আমরা দমে যাইনি, থেমে যাইনি নিরাশাক্ত তাচ্ছিল্যতায়। প্রত্যেকের কেই কেউ ঈদ খরচের অধিকাংশ বা পুরাটাই দিল আর তা দিয়েই যাবতীয় অায়োজন সম্পন্ন করা হলো। একজন অন্ধ পঞ্চোর্ধ্ব বিধবাকে বস্ত্রদানে বৃদ্ধা নালিশ করে বলল, আমি আর এই বাড়িতে থাকতে চাইনা। কারণ জানতে চাইলে বলে তার ভাই ও ভাইয়ের স্ত্রী তাকে খেতে দেয়না, অন্ধ বলে খোঁচা দেয়। এই অন্ধাবস্থায় তাকে নিজ হাতে রান্না করে খেতে হয়। সকল কাজ তার নিজেকে করার লাগে। চোখ যে মহান আল্লাহর কত বড় নেয়ামত তা এই দৃষ্টিহীন পৌঁঢ়া ও তার সচনীয় জীবনধারা সর্ম্পকে অবগত নাহলে বোধ করি বুঝতামনা হয়ত; তার আবেগ, উচ্ছাসতায় স্বাধীনতাস্বাধের এক বিপ্লব উদ্বেলিত হচ্ছিল। এতদোপরেরও তার মানবেতর জীবনযাপন আমার হৃদয়ে বর্ষার মেঘ জমালো, ব্যথায় জর্জরিত হলাম সকলেই। নিজের অজান্তেই অশ্রুতে দুচোখ টলমল করছিল- যদিও সেই চোখের পানি অন্ধ পৌঁঢ়ার ব্যথার সমবেদনার নয় ছিল কৃতজ্ঞতার। কারণ মহান আল্লাহর অপার করুণা যে আমাকে তার নেয়ামতের কোন দিক থেকেই কমতি করে সৃজন করেননি।
আজো সেই বৃদ্ধার অন্ধত্ব জীবনকথা মনে পড়লে নত হয়ে যাই মহান মালিকের দ্বারে। হৃদয়ে আজো দোলা দেয় সুললিত কণ্ঠের কৃতজ্ঞতাময় সেই সুর…..
আল্লাহ তুমি দয়ার সাগর
রাহমানির রাহিম..।
তোমার দয়ায় পূর্ণ আমার
সারা নিশি-দিন।।