জুবায়ের আহমেদ জীবন, নিজস্ব প্রতিবেদকঃ গত মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) লেবাননের রাজধানী বৈরুতে রাসায়নিক বিস্ফোরণে মৃত্যের সংখায় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩৫ জন, আহতের সংখ্যা ৫ হাজার ছাড়িয়েছে। সর্বশেষ পাওয়া তথ্যে বৈরুর বিস্ফোরণে চার বাংলাদেশির নিহতর খবর পাওয়া গেছে এবং তাদেরকে শনাক্ত করাও সম্ভব হয়েছে। নিহতরা হলেন- ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেহেদি হাসান, রাসেল মিয়া, মাদারীপুরের মিজানুর রহমান এবং কুমিল্লার রেজাউল।
বৈরুতে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল জাহাঙ্গীর আল মোস্তাহিদুর রহমান এক ভিডিও বার্তায় প্রথমে দুজন নিহতের কথা জাবিয়েছিলেন। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও দুজন মারা যান। তিনি বলেন, লেবাননে প্রায় দেড় লাখের মতো বাংলাদেশি বিভিন্ন শ্রেণিপেশায় কর্মরত আছেন। এ ঘটনায় ৮০ জন বাংলাদেশি আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৮ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। দূতাবাসের পক্ষ থেকে তাদের যথাযথ চিকিৎসার জন্য সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করা হচ্ছে এবং সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, যেখানে বিস্ফোরণ হয়েছে, সেখান থেকে মাত্র ২০০ গজ দূরে লেবাননে জাতিসংঘের অন্তর্বর্তীকালীন বাহিনীতে (ইউনিফিল) কর্মরত বাংলাদেশ নৌবাহিনীর একটি জাহাজ ছিলো। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাহাজ ‘বিজয়’-এর ক্যাপ্টেনের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, বিস্ফোরণে জাহাজের বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং জাহাজে থাকা সদস্যদের মধ্যে ২১ জন বিভিন্নভাবে আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত দুজনের এক জনের অবস্থা ভালো হওয়ায় হাসপাতাল থেকে তাকে নিয়ে আসা হয়েছে এবং অন্যজন এখনো চিকিৎসাধীন আছেন।
মঙ্গলবার বৈরুর স্থানীয় সময় সকালে রাজধানীর একটি গুদাম থেকে সংরক্ষিত ২৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট থেকে ভয়াবহ এ বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটে। এ দূর্ঘটনায় ১৩৫ জন নিহত ও ৫ হাজার মানুষ আহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। হতাহতের সংখ্যা বাড়তে পাড়ে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। খবর আল- জাজিরা
বন্দরের ১২ নম্বর ওয়্যারহাউজে খোলামেলা ফেলে রাখা হয়েছিল এই রাসায়নিক। যার পরিণতিতে ধ্বংসপ্রায় রাজধানী। প্রাণ গেছে শতাধিক মানুষের।
২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে বাতুমি থেকে রাসায়নিকবাহী একটি জাহাজ আটক করে লেবানন কর্তৃপক্ষ। রাশিয়ার ব্যবসায়ী ইগর গ্রেচুশকিন দুই হাজার ৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট জর্জিয়া থেকে মোজাম্বিকে পাঠাচ্ছিলেন জাহাজটিতে করে ।
মস্কোর রেন টিভি জানিয়েছে, গ্রেচুশকিনের জাহাজটি আটক করা হয়েছিল এবং রপ্তানি সংক্রান্ত কাগজপত্র যথাযথ পাওয়া যায়নি।
লেবানন কর্তৃপক্ষ রাসায়নিকের নিরাপত্তার জন্য নাবিকদের জাহাজে থাকতে বাধ্য করে। পরে অনশন ধর্মঘট শুরু করলে তাদেরকে জাহাজ ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।
নাবিকরা ওই সময় জানায়, মোটরবাইক ভক্ত গ্রেচুশকিন দেউলিয়া হয়ে গেছেন এবং তিনি জাহাজটি পরিত্যাক্ত অবস্থায় ফেলে গেছেন। এরপর জাহাজের অধিকাংশ কনটেইনার বন্দরের ১২ নম্বর ওয়্যারহাউজে রাখা হয়।
আল মানার টেলিভিশনে লেবননের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন- মৃত্যের সংখ্যা বেড়ে দাড়িয়েছে ১৩৫ জন। আহতের সংখ্যা ৫ হাজার ছাড়িয়েছে। এছাড়াও এখনো ১০ জন নিখোঁজ রয়েছে।
বিস্ফোরণের তীব্রতায় গোটা শহরই ভূমিকম্পের মতো কেঁপে ওঠে। ২৪০ কিলোমিটার দূর থেকেও বিস্ফোরণের তীব্রতা টের পাওয়া গিয়েছিল। শক ওয়েবে ভেঙ্গে পড়েছিল ৫ কিলোমিটারের মধ্যকার দালানগুলোর জানালার কাচ। ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত এর প্রভাব পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বৈরুর ৪০ শতাংশ ঘরবাড়ি। বিস্ফোরণে বৈরুর ৩ লাখ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে দেশটির সরকার দেশটিতে তিন দিনের জাতীয় শোকের সাথে ২ সপ্তাহের জরুরি অবস্থার ঘোষণা করেছেন।
Post Views:
319